পটি ট্রেনিংয়ে বাবার ভূমিকা

পটি ট্রেনিংয়ে বাবার ভূমিকা

পটি ট্রেনিং (Potty Training) একটি শিশুর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। শুধু শিশু নয়, বাবা-মায়ের জন্যও এটা একটা চ্যালেঞ্জিং সময়। বিশেষ করে মায়েরা যেহেতু সন্তানের দেখভালের মূল দায়িত্বটা নিয়ে থাকেন, তাই পটি ট্রেনিংয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকাই বেশি দেখা যায়। কিন্তু পটি ট্রেনিংয়ে বাবারও যে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সেটা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না। একজন বাবার সাহায্য ও সমর্থন পটি ট্রেনিংয়ের সময়টাকে অনেক সহজ ও সফল করে তুলতে পারে। আসুন, জেনে নিই পটি ট্রেনিংয়ে বাবারা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন।

পটি ট্রেনিং (Potty Training), টয়লেট ট্রেনিং (Toilet Training), শিশুদের পটি ট্রেনিং, বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং, বাবার ভূমিকা, প্যারেন্টিং টিপস (Parenting Tips), শিশু যত্ন (Child Care) – এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা আলোচনা করবো।

কেন পটি ট্রেনিংয়ে বাবারা বিশেষভাবে দরকারি?

সাধারণত দেখা যায়, মায়েরা সন্তানের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মেটাতে বেশি সময় দেন। তাই শিশুরা মায়ের কাছেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। পটি ট্রেনিংয়ের সময়ও তারা মাকে বেশি ভরসা করে। কিন্তু বাবারা যদি এই সময়টাতে এগিয়ে আসেন, তাহলে অনেক সুবিধা হতে পারে:

  • শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে: বাবা যখন পটি ট্রেনিংয়ে সাহায্য করেন, তখন শিশু বুঝতে পারে যে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাবার উৎসাহে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

  • মায়ের উপর চাপ কমে: পটি ট্রেনিংয়ের সময় মায়েরা অনেক বেশি মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। বাবারা এগিয়ে এলে মায়ের উপর সেই চাপ কিছুটা কমে এবং তিনি ধৈর্য ধরে শিশুকে সাহায্য করতে পারেন।

  • পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়: বাবা যখন সন্তানের পটি ট্রেনিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অংশ নেন, তখন তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হয়।

  • শিশুর দ্রুত শেখা: বাবারা সাধারণত খেলাধুলা ও মজার ছলে শিশুদের অনেক কিছু শেখাতে পারেন। পটি ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রেও তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুকে দ্রুত অভ্যস্ত করতে পারেন।

    পটি ট্রেনিংয়ের আগে বাবার প্রস্তুতি

    পটি ট্রেনিং শুরু করার আগে বাবার কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। এই প্রস্তুতি শিশুকে মানসিকভাবে তৈরি করতে সাহায্য করবে।

  • পটি ট্রেনিং সম্পর্কে জানা: প্রথমে পটি ট্রেনিং কী, কখন শুরু করা উচিত এবং এর নিয়মগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বই বা অভিজ্ঞ অভিভাবকদের কাছ থেকে এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

  • শিশুকে বোঝানো: পটি ট্রেনিং শুরু করার আগে শিশুকে এর সম্পর্কে ধারণা দিন। টয়লেট সিট বা পটির ব্যবহার সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে বলুন।

  • ধৈর্য ধরা: পটি ট্রেনিং একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাই ধৈর্য ধরা খুবই জরুরি। প্রথম কয়েকদিনে হয়তো শিশু সফল নাও হতে পারে, কিন্তু তাতে হতাশ না হয়ে তাকে উৎসাহ দিতে থাকুন।

    পটি ট্রেনিংয়ের সময় বাবার করণীয়

    পটি ট্রেনিং শুরু হয়ে গেলে বাবারা বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারেন:

  • রুটিন তৈরি করা: শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে পটিতে বসানোর জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। এই রুটিন মেনে চলতে মাকে সাহায্য করুন।

  • উৎসাহিত করা: যখন শিশু পটিতে বসতে রাজি হবে, তখন তাকে প্রশংসা করুন এবং উৎসাহিত করুন। সফল হলে ছোটখাটো পুরস্কারও দিতে পারেন।

  • ইতিবাচক থাকা: পটি ট্রেনিংয়ের সময় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুকে বকাঝকা না করে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন।

  • মজার ছলে শেখানো: পটি ট্রেনিংকে মজার করে তুলুন। পটি নিয়ে গান তৈরি করুন বা গল্প বলুন। এতে শিশু আনন্দ পাবে এবং সহজে শিখতে পারবে।

  • বই পড়া: পটি ট্রেনিং নিয়ে অনেক মজার বই পাওয়া যায়। শিশুকে সেই বইগুলো পড়ে শোনাতে পারেন।

  • নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা: আপনার ছোটবেলার পটি ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা শিশুর সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে সে বুঝতে পারবে যে এই অভিজ্ঞতা সবারই হয়।

    বয়স অনুযায়ী বাবার ভূমিকা

    শিশুর বয়স অনুযায়ী পটি ট্রেনিংয়ের পদ্ধতিতে ভিন্নতা আনা জরুরি। নিচে বয়স অনুযায়ী বাবার ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

  • ১৮ মাস – ২ বছর: এই বয়সে শিশুরা সাধারণত পটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকে না। তবে তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করার জন্য বাবা বিভিন্ন ধরনের ছবিযুক্ত বই ব্যবহার করতে পারেন। পটি বা টয়লেট সিটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।

  • ২ বছর – ৩ বছর: এই সময় পটি ট্রেনিং শুরু করার জন্য উপযুক্ত। বাবা শিশুকে পটিতে বসানোর নিয়ম শেখাতে পারেন। তাদের পছন্দের কার্টুন বা খেলনা দিয়ে পটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।

  • ৩ বছর – ৪ বছর: এই বয়সে শিশুরা নিজেরাই পটি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। বাবা তাদের পোশাক পরা ও খোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বোঝাতে পারেন।

    কিছু জরুরি টিপস

  • পজিটিভ থাকুন: পটি ট্রেনিংয়ের সময় পজিটিভ থাকাটা খুব জরুরি। বাবা-মা দুজনেই যদি ইতিবাচক থাকেন, তাহলে শিশুর জন্য বিষয়টি সহজ হয়ে যায়।

  • তুলনা করবেন না: প্রতিটি শিশুই আলাদা। তাই আপনার সন্তানের পটি ট্রেনিংয়ের গতি অন্য শিশুদের থেকে ভিন্ন হতে পারে। কখনোই অন্য শিশুদের সাথে তুলনা করবেন না।

  • বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি পটি ট্রেনিং নিয়ে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।

পটি ট্রেনিং একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সময় বাবারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিলে একদিকে যেমন মায়ের উপর চাপ কমে, তেমনই শিশুও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার সামান্য সাহায্য আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একটি সুন্দর ভিত তৈরি করে দিতে পারে।

এই সময়ে আপনার বাচ্চার জন্য দরকারি কিছু জিনিস, যেমন – আরামদায়ক পোশাক, পটি সিট, মজার বই, খেলনা ইত্যাদি পেতে আমাদের কিডস স্টোরে ভিজিট করতে পারেন। আপনার সন্তানের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনাই আমাদের লক্ষ্য।

Subscribe to News
Comments(0)
No Comments Yet. Write First Comment.
Submit Comment
More Comments
Submit

আরো পড়তে পারেন

Subscribe to News
পটি ট্রেনিংয়ে বাবার ভূমিকা